হঠাৎ অর্থনৈতিক ছন্দপতনে প্রেমের কাছে হেরে গেলো এক প্রেমিকের ভালোবাসা। অর্থের কারণেই প্রেমের সমাধি হল স্ত্রী ভক্ত এক বউ পাগল যুবকের। স্ত্রীর ভালোবাসা পেতে অবশেষে বিদায় নিতে হল কুষ্টিয়ার হালসার প্রতিভাবান প্রকৌশলীর। গত শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ একটি ব্রিজের আড়া থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এটিকে হত্যা হিসেবেই দেখছে তার পরিবার।
জানা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসা বাজার এলাকার ফজলুর রহমানের একমাত্র পুত্র শামীম সুলতান রাজু (২৮) কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল। চাকরির পাশাপাশি আউটসোর্সিং এর কাজ করত। কর্মরত অবস্থায় অনেক সম্পদের মালিক হন তিনি। অর্থ-সম্পদের কারণেই ভালো পরিবারের শিক্ষিত মেয়ের খোঁজ করতে থাকেন বিয়ের জন্য।
এর মাঝে রাজুর সাথে কর্মরত এক যুবকের তথ্যে ইশিতা নামের এক পাত্রীর পরিচয় পান। ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে পাত্র রাজু ও পাত্রী ইশিতার সম্পর্ক অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়। অবশেষে পারিবারিক ভাবে দেখাশোনার পর ইশিতার সাথে রাজুর গত ২০১৭ সালের ২২শে অক্টোবর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ইশিতা কুষ্টিয়ার একটি ম্যাটসে অধ্যয়নরত ছিল। স্বামী শামীম সুলতান রাজু তাকে সকল সহযোগিতা দিয়ে পাশ করিয়ে স্ত্রীকে ঢাকায় নেন।
ঢাকায় গার্মেন্টস বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে চাকরি দেন স্বামী রাজু। চাকরি পেয়েই স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা শুরু হয় রাজুর। অবাধ্য হয়ে যায় স্ত্রী ইশিতা। এরই সাথে শেয়ারবাজার ধ্বস থেকে শুরু করে আউটসোর্সিং ব্যবসায়ও ধ্বস নামে। বিপদে পড়ে রাজু তার গচ্ছিত অর্থ সম্পদ সব নিঃশেষ হয়ে যায়।
স্ত্রীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তাকে না জানিয়ে নিজের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ার করত। সংসারের সবকিছু সামলিয়েও রাজু তার স্ত্রী ইশিতার মন পেল না ।
এই অবস্থায় স্ত্রী তার স্বামী রাজুর মোটর সাইকেলের ভাড়া চালানোর বিষয়টি টের পেয়ে যায়। স্ত্রী ইশিতা এ বিষয়টিকে অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অপমানজনক মনে করে তার বাড়িতে জানায়। ইশিতার বাড়ির লোকজন অগ্নিশর্মা হয়ে মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে বলে। এতে মেয়েটিও আলাদা হয়ে যায়।
মেয়েটি নিজ পরিবারের কথা শুনে বিগত সময়ে স্বামী রাজুর পরিবারকে তুচ্ছ কথাবার্তাকে পুজি করে স্বামীকে একতরফা তালাক দেয়। গত ২০১৯ সালে ১২ সেপ্টেম্বর শামীম সুলতান রাজুকে তালাক দিলে সে স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। আইনিসহ আইনজীবীদের পরামর্শ নেন।
ফতোয়া চান হাক্কানি ওলামাদের কাছে। হক্কানী দরবার তাদের বিবরণ শুনে এক তরফা তালাক প্রদানের বিষয়ে তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন। স্বামী রাজু তার স্ত্রীকে নেয়ার জন্য তাদের উভয়ের পরিবারের সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মেয়ের অভিভাবক কোন ক্রমেই তাতে রাজি হয়নি।
এর পরেও রাজু মেয়েটির ভালোবাসায় পিছু পিছু ঘুরতে থাকে। রাজুর ভালবাসার দুর্বলতাকে মেয়েটি মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। ডিভোর্স দেয়ার পর সকলের অজান্তে তারা রুম ভাড়া করে ঢাকায় মিরপুরে থাকত। মেয়েটি রাজুর কাছ থেকে সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করলেও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়।
সম্প্রতি দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা দেশের মানুষ গৃহবন্দি। রাজুও অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। এ জন্য রাজু বাড়ি থেকে ১০ হাজার টাকা চেয়ে নেয়। কিন্তু ওই টাকায় কয়দিন যায়..?
চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে তার জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। না পারে স্ত্রীকে বলতে না পারে পারিবারিক সমস্যা সমাধান করতে। তাই তার দুর্বিসহ দিন নিয়ে shamin sultan এই আইডিতে তিনি ক্ষোভ, মান, অভিমান, দুটি পরিবারের অনেক কেই দোষারোপ করে একটা স্ট্যাটাস দেয়। ওই স্ট্যাটাস দেয়ার একদিন পরেই নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ ব্রীজে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়।
উল্লেখ্য আত্মহত্যার আলামত লাশের মধ্যে ছিল না বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বর্ণনা দেয়। তার শরীর ও মুখেসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড না আত্মহত্যা তা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এদিকে রাজুর পরিবার পুলিশ বিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সঠিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার।
তথ্যসূত্র : শামীম সুলতান রাজুর ফেসবুক আইডি