ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে বাংলাদেশ। তা
সত্ত্বেও দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য প্রস্তুত করা হাজার হাজার বেড
খালি পড়ে আছে হাসপাতালে। কর্মকর্তা ও দুর্ভোগের শিকার মানুষগুলো বলছেন,
হাসপাতালে যেতে খুব বেশি আতঙ্কিত লোকজন। উদ্বিগ্ন রোগীরা। এর কারণ,
সেখানকার স্বাস্থ্যসেবার মান। মেডিকেল দাতব্য সংস্থার একজন কর্মকর্তা
এএফপিকে বলেছেন, কিছু রোগী স্বাস্থ্যকর্মীদের বলেছেন, তারা হাসপাতালে
যাওয়ার চেয়ে বাড়িতেই মরতে পছন্দ করেন।
শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশে
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ। প্রতিদিন এ
তালিকার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রায় তিন হাজার মানুষ।
শুক্রবার মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ২২৭৫। তবে স্বাস্থ্য
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। কারণ, করোনার পরীক্ষা
করা হচ্ছে খুব সামান্য সংখ্যক মানুষের।
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের
জানামতে, ঢাকায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য রয়েছে ৬৩০৫টি বেড। তার
মধ্যে প্রায় ৪৭৫০টি বেড ব্যবহার করা হচ্ছে না। করোনা ভাইরাস মোকাবিলার
জন্য মাঠপর্যায়ে নতুন ২ হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে।
সেখানে মাত্র একশত রোগী রয়েছেন। ওদিকে করোনা ভাইরাসের হটস্পট হয়ে উঠেছে
দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রাম। সেখানে এ হাসপাতালের এ সম্পর্কিত বেডের
মাত্র অর্ধেকে বর্তমানে রোগী আছেন। এই দুটি শহরে সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি
মানুষের বসবাস। বাংলাদেশে করোনায় ‘এক্টিভ কেসের’ সংখ্যা ৮৭ হাজার। এ দুটি
নগরীতে রয়েছে তার প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বেশির ভাগ
রোগী বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে হাসপাতালগুলোর বেড ফাঁকা।
স্বাস্থ্য
বিভাগের উপপ্রধান নাসিমা সুলতানা এএফপিকে বলেছেন, বেশির ভাগ রোগীই হালকা
লক্ষণযুক্ত। পর্যাপ্ত টেলিমেডিসিন সেবা দেয়া হচ্ছে। এটা হতে পারে হাসপাতালে
রেড ফাঁকা থাকার একটি কারণ। অতিরিক্ত আক্রান্তের আশঙ্কায় বেড সংখ্যা
বাড়ানো হয়েছিল।
কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তরা
বলছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে তাদেরকে যে মানের সেবা দেয়া হয় তা নিয়ে তারা
উদ্বিগ্ন। চট্টগ্রামে এম্বুলেন্স ও দাফন সেবা দিয়ে থাকে আল মানাহিল দাতব্য
সংস্থা। এর সিনিয়র একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা (স্বাস্থ্যকর্মীরা)
আমাদেরকে বলে দিয়েছেন, হাসপাতালে মরার চেয়ে বাসায় গিয়ে মরা ভাল।
জাতিসংঘ
৮০ হাজারের বেশি মানুষের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, শতকরা
৪৪ ভাগ বাংলাদেশি বলেছেন, তারা সরকারি সেবার হেল্পলাইনে কল করতেই খুব বেশি
ভীতসন্ত্রস্ত। বেশির ভাগের আতঙ্ক, যদি করোনা পজেটিভ ধরা হবে তাহলে
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।
বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্টের প্রধান
রশিদ-ই-মাহবুবের মতে, সরকারি হাসপাতালগুলো রোগীবান্ধব নয়। একটি নেতিবাচক
ধারনা তৈরি হয়ে গেছে এ নিয়ে। এ জন্যই বেশির ভাগ রোগী বাসায় থাকাকেই বেছে
নিচ্ছেন। সামান্য সংখ্যক রোগী বেসরকারি হাসপাতালের খরচ বহনে সক্ষম হন। তিনি
আরো বলেন, শুধু মারাত্মক শ্বাসকষ্ট হলেই মানুষ সরকারি সেবাকেন্দ্রে
যাচ্ছেন। করোনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী মারা যাচ্ছেন বাড়িতেই।
একটি
পরিবারের আট সদস্যের একজন নারী বলেছেন, তাদের পরিবারের সবাই করোনা ভাইরাসে
আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারা হাসপাতালে যাওয়ার চেয়ে বাড়িতে থাকাকেই বেছে
নিয়েছেন। এমনকি তার মার যখন শ্বাসকষ্ট ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছে, তখনও
পরিবারটি তাকে হাসপাতালে পাঠায় নি। পরিবর্তে তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া
নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা শুনেছি নিজেরা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে হাসপাতালে
রোগীর ধারেকাছে আসেন না চিকিৎসক ও নার্সরা।
রিপোর্টে আরো বলা হয়,
বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর বেশ নাজুক পরিচিতি আছে। এমনকি মহামারি শুরুর আগেও
তা ছিল। সরকারি হিসাবে, গত বছর তাই চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ
ভারত গিয়েছেন। অন্যদিকে সম্পদশালী কয়েক হাজার বাংলাদেশি যান থাইল্যান্ড বা
সিঙ্গাপুরে চেকআপ করাতে। কিন্তু করোনা মহামরির কারণে আন্তর্জাতিক সফর বাতিল
হওয়ায় তারা দেশ ছাড়তে সক্ষম হন নি।