এক দিনে রেকর্ড তিন হাজারের কাছাকাছি রোগী শনাক্তের মধ্য দিয়ে গতকাল দেশে করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা অর্ধলক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবে ৭০০ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার দেশে করোনা শনাক্তের ৮৭তম দিনে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এ যাবৎ সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯১১ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। একই সময়ের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৩৭ জন। এক দিনে এতসংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ জন মারা গিয়েছিলেন। এ ছাড়া এর আগে এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের ঘটনাও ছিল গত রবিবার ২ হাজার ৫৪৫ জনের শনাক্ত হওয়া। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষাও হয়েছে এ যাবৎ সর্বোচ্চ। এদিন সাড়ে ১২ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল প্রায় ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ পরীক্ষাকৃত প্রতি একশজনে প্রায় ২৩ জনের মধ্যেই করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের এই হারও গত ৮৬ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গতকাল নিয়মিত বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত) ৫২টি ল্যাব থেকে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৪ হাজার ৯৫০টি। পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৭০৪টি। এসব পরীক্ষায় ২ হাজার ৯১১ জনের মধ্যে কভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এদিন শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৯১ শতাংশ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩৭ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫২৩ জন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৫২ হাজার ৪৪৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন সর্বমোট ৭০৯ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মোট ১১ হাজার ১২০ জন। এ পর্যন্ত শনাক্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও সুস্থতার হার ২১ শতাংশ।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর প্রথম এক মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১২৩ জন। দ্বিতীয় মাসে শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ৫৯৬ জন এবং তৃতীয় মাসের গতকাল পর্যন্ত ২৭ দিনে শনাক্ত হলো ৪০ হাজার ৭২৬ জন। তৃতীয় মাসের শেষদিকে এসে রোগী শনাক্ত এতটাই বেড়েছে যে, প্রথম ২৫ হাজার রোগী শনাক্ত হয় গত ১৯ মে পর্যন্ত ৭৩ দিনে এবং শেষের ১৪ দিনে শনাক্ত হয়েছে তার চেয়েও বেশি প্রায় ২৭ হাজার রোগী। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে গত দুই সপ্তাহে। প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি মৃত্যুও হয়েছে গত দুই সপ্তাহে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের বিষয়ে তিনি জানান, তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৩ জন ও নারী ৪ জন। মৃতদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের। বাকিদের মধ্যে ১০ জন ঢাকা, ৪ জন সিলেট, ৩ জন বরিশাল, ২ জন রাজশাহী, ২ জন রংপুর ও ১ জন ময়মনসিংহ বিভাগের। তাদের ২৮ জন মারা গেছেন হাসপাতালে এবং ৯ জন মারা গেছেন বাসায়। তাদের বয়স ২১-৩০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১-৪০-এর মধ্যে ৪ জন, ৪১-৫০-এর মধ্যে ১ জন, ৫১-৬০-এর মধ্যে ১০ জন, ৬১-৭০-এর মধ্যে ৯ জন, ৭১-৮০-এর মধ্যে ১০ জন এবং ৮১-৯০ বছরের মধ্যে ২ জন।
বুলেটিনে আরও বলা হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত ৩৮৮ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন মোট ৬ হাজার ২৪০ জন। একই সময়ে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে আরও ২ হাজার ৫০৬ জন। বর্তমানে সারা দেশে কোয়ারেন্টাইনে আছেন মোট ৫৮ হাজার ৫৪৫ জন। স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩, ৩৩৩ ও আইইডিসিআরের হটলাইনে ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিষয়ক কল এসেছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৩০টি। স্থল, সমুদ্র ও বিমানপথে ২৪ ঘণ্টায় দেশে প্রবেশ করেছেন ৯৪৭ জন, তাদের প্রত্যেককে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে সাধারণ কাপড়ের মাস্ক পরার পরামর্শ : সাধারণ কাপড়ের মাস্ক পরার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে ডা. নাসিমা বলেন, সাধারণ কাপড়ের মাস্ক করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একটি সহজ বৈজ্ঞানিক সমাধান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শুধু কথা বলার মাধ্যমেই এই রোগের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। কিন্তু শুধু একটি সাধারণ কাপড়ের মাস্ক দিয়েই আমরা জীবাণুযুক্ত হাঁচি, কাশির তরল কণা বা ড্রপলেট প্রতিরোধ করতে পারি। তবে যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা আছে, অজ্ঞান বা অক্ষম ও যাদের মাস্ক খোলার জন্য অন্যের সাহায্য লাগে, তারা এ ধরনের কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে পারবে না। সিডিসি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সার্জিক্যাল ও এন ৯৫ মাস্ক শুধু স্বাস্থ্যকর্মী যারা আক্রান্তের সংস্পর্শে যান, তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। সাধারণ মানুষরা সব সময় ঘরে তৈরি কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করবে। সাধারণ কাপড়ের মাস্কের সুবিধা হলো, এটি পরতে আরামদায়ক, নাক-মুখ ভালোভাবে ঢেকে যায়, বাধাহীনভাবে শ্বাস নেওয়া যায় এবং পুনরায় ব্যবহার করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন পরামর্শকের উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার চেয়েও বেশি কার্যকর’। তবে মাস্ক পরা তুলনামূলক বেশি কার্যকর হলেও সামাজিক দূরত্ব ও হাত ধোয়ার অভ্যাসও চালিয়ে যেতে বলেন ডা. নাসিমা।